এগ্রো অর্গানিকা: আইপিও’র আগেই প্লেসমেন্ট মেকানিজমের অভিযোগ (পর্ব-১)

রুহান‌ আহমেদ: প্রাথমিক গণপ্রস্তাব আইপিও এর মাধ্যমে দেশের শেয়ার বাজার থেকে ৫ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে এগ্রো অর্গানিকা পিএলসি। এরই মধ্যে প্লেসমেন্ট মেকানিজমের অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে কোম্পানির উৎপাদন নেই। প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। নিজস্ব পণ্য নেই, সাপ্লায়ারদের ভুয়া নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরো অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিটি কাগজে কলমে বাজার থেকে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করলেও মূলত বিনিয়োগকারীদের শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হাতে নিয়ে সাজিয়ে এসেছে। আর তাতে সহযোগিতা করছে ইস্যু ম্যানেজার। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।

সেই কৌশলের আলোকেই তালিকাভুক্তির আবেদনের আগে কোম্পানিটির পেইড আপ ছিল মাত্র ২৬ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সেই ২৬ লাখ টাকার কোম্পানি ৩৮ কোটি বানানো হয়েছে। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির আবেদনের আগে কোম্পানিটি পেইড আপ ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করেছে ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ বা ১৪৬ শতাংশেরও বেশি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কোম্পানিটির ২০১৯ সালে যেখানে কোম্পানির পেইড-আপ ক্যাপিটাল ছিল ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭০০ টাকা। সেখানে এক বছরের ব্যবধানে পেইড-আপ ৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ লাখ শেয়ার শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছে। যাতে শেয়ারবাজার থেকে ভালো পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে বর্তমান বোর্ড এর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উদে্যাক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৯২২টি শেয়ার। যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪১.১৮ শতাংশ। বাকি ২ কোটি ২৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৮টি শেয়ার অন্যান্যদের কাছে রয়েছে। যা মোট শেয়ারের ৫৮.৮২ শতাংশ।

শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অন্যান্যদের কাছে থাকা শেয়ারগুলোর মাধ্যমেই বাজার থেকে শত কোটি টাকা হাতানোর কৌশল প্রস্তুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী এই ২ কোটি ২৫ লাখ শেয়ারের লক ইন থাকবে মাত্র এক বছর। আর এই এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হবে। এরপর যখন লক ইন ফ্রি হবে ঠিক সে সময়ে শেয়ারগুলো বাজারে ছেড়ে শত কোটি টাকা হাতানো বাস্তবায়ন হবে।

আর সেই কৌশল বাস্ত বায়ন করার লক্ষ্যেই নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার প্লেসমেন্টে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শেয়ার নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংক ডিপোজিট সঠিকভাবে দেখানো হয়নি। ক্লায়েন্ট বা কাস্টমারদের ডিপোজিটকে শেয়ারমানি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

মাত্র ২৬ লাখ টাকার পেইড আপের কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য অস্বাভাবিক বোনাস শেয়ার ইস্যু করা ও প্লেসমেন্ট ম্যাকানিজম করে নিজেদের দখলে বিপুল পরিমাণ শেয়ার নেওয়ার পেছনে শেয়ারবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখে ফেলার দুরভিসন্ধি চলছে।

মাত্র ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের শো ডাউন করে কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর লকইন শেষে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করার পরিকল্পনা করেছে। এতে শেয়ারবাজার তথা বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এসব বিষয়ে কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপক শাহজালাল ইক্যুইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসপেক্টাসের সব উল্লেখ রয়েছে। যা কোম্পানির কাছ থেকেও জানতে পারা যাবে।

একই বিষয়ে এগ্রো অর্গানিকার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শরিফুল ইসলাম শেয়ারসূচক’কে বলেন, আমাদের শেয়ার সংখ্যা নিয়ম মেনে আরজেএসসি ফি এর মাধ্যমে বেড়েছে, যা অডিট রিপোর্ট এবং ট্যাক্স ফাইলের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’কে (এনবিআর) জানানো হয়েছে। আর আমাদের প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ম মেনেই ইস্যু করা হয়েছে।

বিপুল পরিমান প্লেসমেন্টের বিষয়ে শাহীন নামে কোম্পানির পরিচালক পরিচয়ে (প্রসপেক্টাসে এমন কোন নাম নেই) বলেন, কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য, নিজস্ব পণ্য নাই এই সকল তথ্য অসত্য ও বানোয়াট। এছাড়া সাপ্লাইয়ারদের ভুয়া নাম ব্যবহার করা হয়নি। যা আমাদের প্রসপেক্টাসে প্রতীয়মান হয়।

অন্যদিকে, পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী শেয়ারসূচক’কে বলেন, আমার কাছে তথ্য রয়েছে- কোম্পানির কোন নিজস্ব কোন উৎপাদন নেই, বাজার থেকে পণ্য কিনে শুধুমাত্র প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করে। তাছাড়া ওদের ব্র্যান্ডের পণ্য খোলা বাজারে পাওয়া যায় না বা কেউ চিনেও না।

কোম্পানিটির মাত্র ২ জন পরিচালক ২০১১ সাল থেকে বাকি ৪ জন ২০১৯ সালে এর সাথে যুক্ত হয়েছেন। যা নিজেদের শেয়ার হারে এগিয়ে থাকার কৌশল।

তিনি আরো বলেন, প্রসপেক্টাস দেখেই বুঝা যায় কোম্পানিটি একটি ফাঁকা বাক্স ছাড়া আর কিছুই না। তালিকাভুক্তির আগেই বিপুল পরিমাণ বোনাস ইস্যু এবং নামে বেনামে পাহাড়সম প্লেসমেন্ট এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হারে কোনঠাসা করা হয়েছে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বে, অন্যদিকে বাজার থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লুট হবে। ভবিষ্যতে কোম্পানিটির মাধ্যমে হতে যাওয়া এই লুট বাস্তবায়নের সহযোগিতা করছে ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইক্যুইটি।

তিনি আরো বলেন, আমি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)কে বলতে চাই আমার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এখনই এই কোম্পানির আইপিও বন্ধ করা হোক। কেননা ইতিমধ্যেই আমার বিনিয়োগকারীরা এই ধরনের হায়-হায় ও লুটপাট কোম্পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। আমি শীঘ্রই এ বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাবো।

দ্বিতীয় পর্ব আসছে শীঘ্রই…

Sharesuchak/RH

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *