অতিরঞ্জিত বেষ্ট হোল্ডিংসের আইপিও: বিডিংয়ে মূল্য বাড়াতে কারসাজি

রুহান আহমেদ: হাজার কোটির দায়-দেনা নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে বহুল আলোচিত বেষ্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির বিডিং শুরু হবে। নানা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ ছত্র ছায়ায় পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করার প্রক্রিয়ার রয়েছে বেষ্ট হোল্ডিংস। অন্যদিকে বিশাল আকারের পরিশোধিত মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে খুব সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন ইলিজিবল ইনভেষ্টররা। তারা মনে করছেন বিডিংয়ে এর সুবিধাজনক মূল্য নির্ধারণে ইস্যুটিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে।

বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ সম্পর্কে জানান, নানা বিতর্ক নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে বেষ্ট হোল্ডিংস। বিপুল পরিমাণ প্লেসমেন্ট ইস্যু, কোম্পানির চেয়ারম্যানের নামে দুদকের মামলা, সম্পদের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দেখিয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধির পায়তারা, অতিরিক্ত শেয়ার সংখ্যা হওয়ায় ব্যাপক সেল প্রেসারের আশঙ্কায় দর অনেক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি ইস্যুগুলো বিবেচনায় খুবই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

তবে বিডিংয়ে শেয়ার প্রাইসে কারসাজি করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বেষ্ট হোল্ডিংসের শেয়ার বেশি দরে বিড করার জন্য বিভিন্ন হাউজের সিইওকে উপহার ও নানা অর্থ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অনেক ফেক কোম্পানির নামে নিজেরা নিজেদের মধ্যে বিডিংয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধির কৌশল সাজানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলে দিতে খোদ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাই সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিএসইকে প্রভাবিত করে নিজেদের মতো করে বেষ্ট হোল্ডিংসের আইপিও পাস করানো হয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পাবলিক ইস্যু আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি আইপিওতে আবেদনের দুই বছর আগে থেকে শুধু বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনোভাবে মূলধন বাড়াতে পারে না। কিন্তু কোম্পানিটি এ রকম সময়ের মধ্যে বন্ড ছেড়ে বড় অঙ্কের মূলধন সংগ্রহ করেছে। বন্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে আবার শেয়ারেও রূপান্তর করা হয়েছে। তাতে আইন অনুযায়ী কোম্পানিটির আইপিও আবেদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ কারণে আইনি বিধানে কোম্পানিটিকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। আইনি ছাড়ের বিষয়টি গত ২৭ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, আইপিও আবেদনের আগে কোম্পানিটি যত ধরনের শেয়ার ইস্যু করেছে, সেগুলোর ওপর তিন বছরের বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা বা লক-ইন থাকবে। যেদিন থেকে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে, সেদিন থেকে এ লক-ইনের সময় গণনা শুরু হবে।

বিএসইসির এ ধরণের সুবিধা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ছাড়বে বেষ্ট হোল্ডিংস। আর অতিরিক্ত শেয়ারের কারণে অতিরিক্ত সেল প্রেসার আসবে সেটাই স্বাভাবিক। তখন কোম্পানিটির শেয়ার দরের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রেও কোম্পানিটির হিমশিম খেতে হবে। তাই এ কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর।

এ ব্যাপারে বেষ্ট হোল্ডিংসের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কারো কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Sharesuchak/RH

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *